অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : গত বছরের অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েল। এরপর থেকেই মূলত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে শুরু করে। সম্প্রতি সেই উত্তেজনা চরম আকার নিয়েছে।
এমন অবস্থায় ইসরায়েল লেবাননে হামলা চালালে ‘ধ্বংসকারী যুদ্ধ শুরু হবে’ বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে ইরান। জবাবে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইসরায়েল। ইহুদিবাদী এই দেশটি বলেছে, যুদ্ধের হুমকি দেওয়ায় ইরান নিজেই ‘ধ্বংস হওয়ার যোগ্য’ হয়ে পড়েছে।
রোববার (৩০ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বিলুপ্ত করে দেওয়ার মতো যুদ্ধের’ বার্তা সম্বলিত যে হুমকি ইরান দিয়েছে তা দেশটিকে ধ্বংসের যোগ্য করে তুলেছে বলে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ শনিবার জানিয়েছেন।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে কাটজ বলেছেন, যে দেশ বা সরকার ধ্বংসের হুমকি দেয়, তারা নিজেরাই ধ্বংস হওয়ার যোগ্য। তিনি আরও বলেন, হিজবুল্লাহ যদি লেবানন থেকে ইসরায়েলে গুলিবর্ষণ বন্ধ না করে এবং সীমান্ত থেকে সরে না যায় তাহলে ইরান-সমর্থিত এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পূর্ণ শক্তি নিয়ে কাজ করবে ইসরায়েল।
মূলত গত অক্টোবরে হামাসের সঙ্গে দখলদার ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এতে যোগ দেয় লেবাননের শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। গত প্রায় ৯ মাস ধরে ইসরায়েলি সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলো লক্ষ্য করে রকেট ও ড্রোন হামলা চালিয়ে আসছে গোষ্ঠীটি।
তাদের এসব হামলার কারণে এসব অঞ্চল থেকে হাজার হাজার মানুষকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে ইসরায়েল।
এছাড়া গত কয়েক মাস ধরে হিজবুল্লাহর এসব হামলার তীব্রতা আরও বেড়েছে। হিজবুল্লাহ যেন সীমান্ত এলাকায় আর হামলা না চালাতে পারে সেজন্য তাদের বিরুদ্ধে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের হুমকি দিয়ে আসছে ইসরায়েল। এ নিয়ে বর্তমানে বেশ উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এমন অবস্থায় গত শুক্রবার জাতিসংঘে অবস্থিত ইরানের মিশন হুমকি দিয়েছে, যদি ইসরায়েল লেবাননে হামলা চালায় তাহলে (ইসরায়েলকে) ‘বিলুপ্তকারী বা ধ্বংসকারী যুদ্ধ শুরু হবে’। এছাড়া ওই অঞ্চলে ইরানের যেসব প্রক্সি প্রতিরোধ বাহিনী রয়েছে তারা সবাই যুদ্ধে যোগ দেবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
যদিও এক্সে দেওয়া পোস্টে ইরানি মিশন আরও বলেছে, লেবানের বিরুদ্ধে ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর যে হুমকি দিচ্ছে এটিকে তারা একটি প্রোপাগান্ডা ও স্নায়ু যুদ্ধ হিসেবেই বিবেচনা করছে।
এর আগে গত সপ্তাহে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক পোস্টে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের মিশন জানায়, ‘নিজেকে বাঁচাতে দখলদার ইসরায়েলের যেকোনও দুরভিসন্ধিমূলক সিদ্ধান্ত এই অঞ্চলকে একটি নতুন যুদ্ধে নিমজ্জিত করতে পারে, যার পরিণতিতে লেবাননের অবকাঠামো এবং সেইসাথে ১৯৪৮ সালের অধিকৃত অঞ্চলগুলোর ধ্বংস হতে পারে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘সম্ভাব্য এই যুদ্ধে নিঃসন্দেহে একটি পক্ষের চূড়ান্ত পরাজয় হবে এবং সেটি হবে ইহুদিবাদী ইসরায়েলের। হিজবুল্লাহর নিজেকে এবং লেবাননকে রক্ষা করার ক্ষমতা রয়েছে। সম্ভবত এই অবৈধ সরকারের পতনের সময় এসেছে।’
এছাড়া হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহও সম্প্রতি বলেছেন, যদি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী লেবাননে যুদ্ধে জড়ায় তবে তার দল ইসরায়েলের পুরো ভূখণ্ডজুড়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার জন্য তার রকেট এবং ড্রোন ব্যবহার করবে।
এমনকি হিজবুল্লাহ ‘কোনও ধরনের সংযম এবং কোনও নিয়ম বা সীমা ছাড়াই’ যুদ্ধ করবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
অবশ্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট চলতি সপ্তাহে বলেছেন, তারা লেবানন সীমান্তের পরিস্থিতি সমাধানের জন্য কূটনৈতিক পথই পছন্দ করেন।
Leave a Reply